কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ কলাপাড়ার অন্তত তিন হাজার সবজি চাষী এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন।করোনার প্রভাবে প্রথম দফায় ক্রেতা সঙ্কটে দাম পায়নি সবজি চাষীরা। এরপরে আমফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সবজির ক্ষেত। ফের কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টাও বিফলে গেল ১২ দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে। বর্ষাকালীন সবজির ক্ষেতগুলো আবার নষ্ট হয়ে গেছে। চারগাছগুলো মরে, পচে, গলে গেছে। এখনও অনেক ক্ষেতের জমানো পানি নামেনি।
হাইলা-কামলা শ্রেণির এই মানুষগুলো ১০-১২ বছর টানা সবজির আবাদ করে নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতার চাকা যতটুকু সামনে নিয়েছিলেন তা যেন ফের পেছনে ঘুরছে। ভাগ্যের পরিবর্তিত অবস্থা যেন থমকে গেছে। বার বার চেষ্টা করছে ঘুরে দাড়ানোর, কিন্তু পারছেন না। মানুষগুলোর সংসারে আর্থিক অনিশ্চয়তার ছাপ পড়েছে। হাসিমুখের মানুষগুলোর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। বিমর্ষ হয়ে নষ্ট ক্ষেতে কেউ কেউ ফের চেষ্টা করছেন। লড়ছেন বেচে থাকার লড়াইয়ে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা, গামইরতলা, এলেমপুর, ইসলামপুর গ্রামঘুরে এসব প্রান্তিক চাষীর দুরবস্থা দেখা গেছে। কুমিরমারা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, তিনি ৪৫ শতক জমিতে করলা, ২৫ শতকে ঝিঙে, ৩৩ শতকে চিচিঙ্গা, ৪৫ শতকে লাউ, ১৫ শতকে চালকুমড়ো, ১৫ শতকে মিষ্টি কুমড়ো, ১২ শতকে শসা, ২৫ শতকে কাঁচা মরিচ, পাঁচ শতকে বোম্বাই মরিচের আবাদ করেছিলেন। এজন্য দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। করোনাসহ আমফান পরবর্তী অতিবৃষ্টি না হলে এ চাষী কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতেন। একই দশা কৃষক আজিজ হাওলাদার, সুলতান গাজী, আব্দুল হক গাজী, মাসুদ গাজী, শাহজাহান গাজী, মনির ফকির, মাসুম চৌধুরী, আবুল কালাম হাওলাদার, খোকন হাওলাদার, নেছার হাওলাদার, অহিদ আকনসহ প্রায় চার শ’ সবজি চাষীর। এসব চাষীর ১২ মাসের আয়ের অবলম্বন সবজি চাষ শেষ হয়ে গেছে। ক্ষেতের ফসল যা ছিল তাও শেষ। আর চারাগাছগুলো পচে-গলে, শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। প্রায় দেড় মাস ধরে নীলগঞ্জের সবজি আবাদের গ্রামগুলোয় শুধু কৃষকের বিবর্ণ ক্ষেতের দৃশ্য চোখে পড়ে।
কৃষকরা যেখানে প্রতিদিন সবজি বিক্রি করে হাজারো টাকা পকেটে গুজে বাড়ি ফিরত। হাসিমুখে বিকেলে ক্ষেতে কাজ করতেন। এখন এ মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে গেছেন। জানালেন, নীলগঞ্জের গোটা ইউনিয়নের কৃষক কমবেশি সবজির আবাদ করেন। তবে কুমিরমারা, মজিদপুর, এলেমপুর, বাইনতলা, সোনাতলা, গুটাবাছা, ইসলামপুর, মোস্তফাপুর, গামইরতলায় বেশি সবজির আবাদ হয়। এসব গ্রামের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক ১২ মাস সবজির আবাদ করেন। যার সংখ্যা কমপক্ষে ছয় শ’। এরা এখন দু’চোখে সব অন্ধকার দেখছেন। কোন ধরনের সহায়তাও জোটেনি এখন পর্যন্ত। কৃষক সুলতান গাজীর ভাষ্য, গত ১০ বছরে এমন দূর্যোগে তারা আগে আর পড়েননি।
এখন কৃষককে বিশেষ প্রণোদনা না দিলে না খেয়ে থাকতে হবে উৎপাদক শ্রেণির এই মানুষগুলোর। উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে পাঁচ/ছয় শ’ কৃষক ১২ মাস সবজির আবাদ করলেও ১২টি ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার সবজি চাষী রয়েছেন। আমফানের পরে টানা বৃষ্টিতে সবজি চাষীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সরকারিভাবে এই মুহুর্তে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের মাত্র ৩২ জন কৃষককে সাত ধরনের বীজ দেয়া হবে। সবজির ক্ষেত তৈরি, বেড়া ও জৈব সার কেনার জন্য প্রত্যেকে ১৯৩৫ টাকা করে নগদ পাবেন। মোট ৪৪৮ জনকে এই সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে পরবর্তীতে আরও সহায়তার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
Leave a Reply